দু’বছরেও মেলেনি শোলমারী খনন প্রকল্পে পরিবেশের ছাড়পত্র

সাপ-বিচ্ছু-পোকামাকড়ের সাথে বসবাস

জাহাঙ্গির আলম

দু’বছরেরও মেলেনি পরিবেশের ছাড়পত্র। ফলে ৪৯ কোটি টাকার “শোলমারী নদী সংলগ্ন বিল ও আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন” প্রকল্প এখনও ফাইল বন্দি রয়েছে। সাপ, বিচ্ছু ও পোকামাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে জীবন-যাপন করছে পানি বন্দি খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার মানুষ।

পানি নিস্কাশনের সব পথ বন্ধ হওয়ায় গতবছর অতিবৃষ্টিতে বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কমপেক্ষ ৬ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এ এলাকার পানি নিস্কাশনে তাৎক্ষনিক ভাবে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। নাম দেওয়া হয় “খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় শোলমারী নদীর সাথে সম্পর্কিত বিল ও আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন” প্রকল্প।

উল্লেখিত প্রকল্পে ভরাট লোয়ার শোলমারী নদীর সাড়ে ১২ কিলোমিটার এবং আপার শোলমারী নদীর ২.৮ কিলোমিটার নদী খনন। ঠাকুমারী খাল, রামদিয়া খাল, সিদুরতলা খাল, ঘোলা খাল, ঘোলা শাখা খাল, সিদুরখালী শাখা খাল, জোড়া বটতলা খাল, খড়িয়া খাল ও ঠিকাদারপাড়া খাল খনন, শোলমারী রেগুলেটরে ৩ টি এবং রামদিয়া রেগুলেটরে ২ টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন। খননের প্রস্তাবিত ৯টি খালের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। প্রকল্পটি গ্রহণ করার পরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ শোলমারী এলাকা পরির্দশন করেন। পরে তিনি ডুমুরিয়ায় গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের সম্মেলন কক্ষে এলাকার রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীদের এ গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন। ওই শুনানিতে সকল বক্তাই প্রকল্পটি দ্রুত গ্রহণপূর্বক তড়িৎ কার্যক্রম শুরু করার পক্ষে মতামত পেশ করেন। কিন্তু গেল দু’বছর ধরে প্রকল্পটি এখনও পাস হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকায় প্রকল্পটি ওই সময় পাস করা হয়নি। পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য ওই দপ্তর চিঠি দিলেও আজও তার কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জি এম আমানউল্লাহ বলেন, নদী খননে দু’বছরেও পরিবেশের ছাড়পত্র না দেওয়া দুঃখজনক। ৬ লাখ লোক পানিবন্দি। দু’উপজেলার ছোটবড় ৩০ বিল প্লাবিত। ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে দু’বছর মাছ ও কাচাঁমাল হয়নি।

অথচ সরকার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাপ, বিচ্চু, পোকামাকড়ের সাথে এ এলাকার মানুষ বসবাস করছে দাবি করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পানিবাহিত নানা রোগে অনেকে আক্রান্ত। অনেকেই মারা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি আতিকুর রহমান বলেন, গতবছরই আমরা তাৎক্ষনিক ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করি। কিন্তু পরিবেশের ছাড়পত্রের কারণে প্রকল্পটি এখনও মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, পরিবেশের কর্মকর্তারা এলাকা ভিজিট করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমনটি শুনেছি। খুলনার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম এ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া চিঠির সরেজমিন তদন্তকারী পরিবেশ অধিদপ্তরের সদ্য অবসরে যাওয়া পরিদর্শক মারুফ বিল্লাহ বলেন, সহকারী পরিচালক পারভেজ আহম্মেদের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিলডাকাতিয়াসহ কমপক্ষে ৩০ বিলের পানি নিস্কাশনের একমাত্র উৎস শোলমারী ১০ ভেন্ট রেগুলেটর। কিন্তু পলিতে গত ৩ বছর ধরে ওই ভেন্টের সকল জল কপাট বন্ধ হয়ে যায়। গেল বছর অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দু’ উপজেলার কয়েক’শ গ্রাম। প্লাবিত হয় হাজার হাজার মৎস্য ঘের। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি তড়িৎ বেশ কয়েকটি স্বল্প মেয়াদি প্রকল্প হাতে নেয়। ফলে গত বছর পানি অপসারিত হয় এবং দু’উপজেলার ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু চলতি বছর আবারও পলিতে ভরাট হয়েছে শোলমারী। এবারও এসব এলাকা প্লাবিত। বাড়ির উঠানে ও ঘরের মেঝেতে পানি। কমপক্ষে ৫০/৬০ টি গ্রাম এখনও ৩ ফুট পানির তলে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন